1. dailybogratimes@gmail.com : admin :
কামারখন্দে সনদের অতিরিক্ত ফি আদায়ে অনড়  - Daily Bogra Times
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

কামারখন্দে সনদের অতিরিক্ত ফি আদায়ে অনড় 

নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:-
  • আপডেট সময়ঃ বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৬ Time View
কামারখন্দে সনদের অতিরিক্ত ফি আদায়ে অনড় 
print news

নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা ১নং ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ ও জন্ম সনদ সংশোধনে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, হিসাব সহকারী ইমরান হোসেন মানিক ও উদ্যোক্তা পরিচালক লাভলী খাতুনের বিরুদ্ধে। সাধারন মানুষকে জিম্মি করে প্রতিদিন ঘরে ৮-১০হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যা প্রিন্ট ও অন্যান্য খরচ বাবদ স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বাৎসরিক ৩৩ হাজার টাকা দেওয়া হলেও কাগজ আর কালি বাবদ ৫০ থেকে ১০০ টাকার স্থলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে পরিষদে আসা ভুক্তভোগীরা জানান। 

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিয়মিত ভাবে বেতন বাদে মাসে লাখ দুয়েক টাকা অবৈধভাবে এই চক্র হাতিয়ে

 নিচ্ছে বলে জানা যায়। 

জানা যায়, সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক দেশে জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা ফি-তে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, শিশুদের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত পঁচিশ টাকা ও পাঁচ বছরের উর্ধ্বে সকল বয়সী নাগরিকের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ টাকা এবং জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে একশ’ টাকা ফি নির্ধারিত থাকলেও সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রত্যেকটিতে দ্বিগুণ হারে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নের সেবাগ্রহীতারা। 

বিয়াড়া গ্রামের সাহেরা ভানুর জন্ম নিবন্ধন করতে আসা দোগাছী গ্রামের সাজেদা বেগম বলেন, আমার বোনের জন্ম নিবন্ধন করতে এসেছি। একটা জন্ম নিবন্ধন বাবদ উদ্যোক্তা লাভলী খাতুনকে ২০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। ফোন না আনার কারনে আপাতত এটা হচ্ছে না। কারনে ওটিপি ফোনে যাওয়ার পরেই সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

ঝাটিবেলাই গ্রামের হাসান আলী ও মমতা বেগমের দুটি জন্ম নিবন্ধন বাবদ তাঁর পুত্র মানিক জানান,  ২৫০ টাকা করে দুটি জন্ম নিবন্ধন বাবদ মোট ৫শ টাকা পরিষদের হিসাব সহকারী ইমরান হোসেন মানিকে দিয়ে করা হয়েছে।

পরিষদে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে আসা আরেক ব্যক্তি বলেন, সংশোধন যকটুকু জানি ৫০ টাকা আর বয়স সংশোধন ১০০ টাকা কিন্তুু তারপরেও আমার কাছে থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আমরা নিরুপায়। দেখা বা বলার কেউ নেই। 

মঙ্গলবার (৮এপ্রিল) সকালে পরিষদে উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে এসে নাম না বলা শর্তে এক ইউপি সদস্য জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী অত্যন্ত সুকৌশ সচিব ও উদ্যোক্তাদের সাথে যোগসাজসে সমাজের গরীব অসহায় মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা লুটে নিচ্ছে। সরকারি কাজে কাউকে তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমতো ভাগবাটোয়ারা সহ বর্তমানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় দু বছরের চালের কার্ড (ভিডাব্লিউবি) প্রকল্পের আওতায় কার্ড নির্বাচনেও ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও টাকা আদায়ের গুঞ্জন ইউনিয়নজুড়ে বইছে। 

সরকারি নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিষয়ে উপস্থিত অনেকেই বলেন, চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিশেষ করে হিসাব সহকারী ও উদ্যোক্তা মিলে নানান টালবাহানা করে গরীবের অর্থ অন্যায়ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই। এলাকায় কর্মজীবী মানুষ হওয়ায় জরুরী তাগিদে যেই টাকাই বেশি নিবে সে টাকা দিয়েই দ্রুত কাজ করে নিয়ে যাওয়া হয়। 

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা লাভলী খাতুন বলেন, ৫০ টাকা আবেদন ফি গ্রহন করি। আর বাকি ১৫০ টাকা হিসাব সহকারী ইমরান হোসেন মানিককে দিয়ে থাকি। 

ইরে থেকে জন্ম নিবন্ধন করলে আমরা তা গ্রহন করি না। প্রত্যেক আবেদন ফি ৫০ টাকা করে সচিব নির্ধারন করে দিয়েছে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি আবেদন করা যায় বলে তিনি জানান। 

জন্ম মৃত্যু বয়স সংশোধনে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী ইমরান হোসেন মানিক জানান, অতিরিক্ত যে টাকা নেওয়া হয় তারমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিয়াকতকে টাকা দিতে হয়। আমাদের করার কিছুই নেই।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) নাজমুল ইসলাম বলেন, সরকারি ফি বাবদ অতিরিক্ত ফি ৫০ টাকা নেওয়া হয়। আমার জানামতে তার চেয়ে বেশি নেওয়া হয় না। সে টাকা দিয়ে কাগজ আর কালি কেনা হয়। অর্থ বছরে বাৎসরিক স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কাগজ কালি ক্রয় বাবদ ৩৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাহলে সেই টাকা দিয়ে কি করা হয় জানতে চাওয়া হলে এবিষয়ে তিনি এড়িয়ে যান। 

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী অতিরিক্ত ফি আদায়ে প্রথমে কিছুই জানেন না বলে জানান। পরে হিসাব সহকারীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া বিষয়টি স্বশরীরে উপস্থিত করা হলে পরে স্বীকার করে বলেন, সেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে প্রত্যয়নপত্রের কাগজ, চা, কারেন্ট বিল ও অন্যান্য খরচ করতে হয়। সরকারি ফি ও উদ্যোক্তা ফি ৫০ টাকার বাহিরেও আমি সর্বনিম্ন ৫০ টাকা নিবোই। এটা প্রশাসনও কিছুই করতে পারবে না। 

এ বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনামিকা নজরুল বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। তথ্য প্রমানের ভিত্তিত্বে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের মুঠোফোনে জানানো হলে তিনি বলেন, উপজেলার ইউএনও মহোদয়কে অবগত করেন। পরে আমি বিষয়টি দেখছি। সরকারি ফি’র বাহিরে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার কোন ধরনের সুযোগ নেই। 

শেয়ার করুন

আরো খবর দেখুন
© All rights reserved © Daily Bogra Times/2025
Theme Customized BY LatestNews