কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি দপ্তরের সহযোগিতায় প্রথম বারের মতো ফুলবাড়ী উপজেলায় চাষ করা হচ্ছে উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি সবজি স্কোয়াশ। দেখতে মিষ্টি কুমড়ার মতো মনে হলেও খেতে লাউয়ের মতো। এটি অতি পুষ্টিকর, সু-স্বাদু, উচ্চ ফলনশীল ও লাভজনক এই সবজি। ভালো লাভ হওয়ায় স্কোয়াশ চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী পরিবেশ বন্ধব পদ্ধতিতে (দিনাজপুর অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়) উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ১৫ জন প্রান্তিক কৃষকের মাধ্যমে ১৫ টি প্রদর্শনী প্লটে স্কোয়াশের চাষ শুরু করা হয়েছে। শীতকালীন অন্যান্য সবজির সাথে স্কোয়াশ চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের ভিমলপুর গ্রামের স্কোয়াশ চাষি হামিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় তার ২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল বিদেশি সবজি স্কোয়াশের ৬০০ বীজ গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে রোপণ করেন। ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ফল আসতে শুরু করেছে। স্কোয়াশ দেশতে মিষ্টি কুমড়ার মতো হলেও খেতে লাউয়ের স্বাদ পাওয়া যায়। স্কোয়াশ গাছ দেখে প্রথম প্রথম কেউই বুঝতে পারবেন না যে, এটি মিষ্টি কুমড়ার গাছ নাকী বিদেশি সবজি স্কোয়াশ গাছ। বাজারে প্রতিটি স্কোয়াশ প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হওয়ায় আশানুরুপ লাভের মুখ দেখছেন। প্রতিটি স্কোয়াশের ওজন হয়েছে প্রকার ভেদে দেড় কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত। এ পর্যন্ত দেড় হাজার স্কোয়াশ বিক্রি করেছেন। এখনও বেশি কিছু স্কোয়াশ জমিতে আছে। মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ চাষে যে লাভের মুখ দেখেছেন তাতে করে অন্য কোনো সবজি চাষ করে দেখতে পেতেন না। ২০ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ চাষে সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। তবে এ পর্যন্ত স্কোয়াশ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকার। তবে এখনও কিছু স্কোয়াশ ক্ষেতে রয়েছে, যেগুলো আগামীতে বিক্রি করা যাবে। অল্প খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে স্কোয়াশ চাষ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি কৃষকদের কাছে একেবারেই নতুন হওয়ায় এর চাষ সম্পর্কে, চাষের পদ্ধতি এবং স্কোয়াশ গাছ ও ক্ষেত দেখতে আশপাশের কৃষকরা প্রতিনিয়তই আসছেন। ধারণা নিচ্ছেন এ সবজির চাষের।
অপর এক স্কোয়াশ চাষি বলেন, ‘সরিষা আবাদে বিঘা প্রতি যে খরচ হয় একই খরচে সেখানে স্কোয়াশ চাষে তার তিন গুণ লাভ হয়। বীজ বপনের মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ দিনেই এ ফসল পাওয়া যায়। প্রতিটি স্কোয়াশ প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা স্কোয়াশ চাষে লাভবান হচ্ছি।’ স্কোয়াশ খেতে একদিকে সুস্বাদু অপরদিকে এই সবজিতে রয়েছে উচ্চ পুষ্টিগুণ। ‘স্কোয়াশের ফুল ও ফল দেখতে অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। ৪৫-৫০ দিনের ভেতর স্কোয়াশ বাজারজাত করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, উপজলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলার ১৫ জন কৃষক স্কোয়াশ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী করতে ১৫ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার, বীঝ, জৈব বালাই নাশক সরবরাহ করা হয়েছে। স্কোয়াশ চাষে সফলতা আনতে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষাবাদ হয়ে থাকে। স্কোয়াশ বিদেশি সবজি। স্কোয়াশ দেখতে অনেকটা শসা বা মিষ্টি কুমড়ার আকৃতির। শসা ও মিষ্টি কুমড়ার মিশ্রণ (ক্রসিং করে) করে স্কোয়াশ নামে সবজি আবিষ্কার করা হয়েছে। এটি এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চাষ হচ্ছে। স্কোয়াশ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল রয়েছে। এটি কাচা ও রান্না দু’ভাবে খাওয়া যায়। খোসাসহ খেলে আরও বেশি উপকারী। ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হার্টের রোগীরা এই স্কোয়াশ খেলে বেশ উপকার পাবেন। স্কোয়াশের উপকারিতা মানুষের মধ্যে তুলে ধরতে হবে, তাহলে এর চাহিদা আরও বাড়বে। এতে কৃষক আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। স্কোয়াশ-১ একটি বারি উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল। উচ্চ ফলনশীল জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্নার উপযোগী।