এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন বাঘার আড়ানী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোচর মহল্লার হাবিবুর রহমান। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। ক্ষেত থেকে তুলে ২৮০টি লাউ শনিবার তিনি নিয়ে যান আড়ানী বাজারের পাইকারি আড়তে। শুরুতে ১০ টাকা দরে কয়েকটি ৬০-৭০টি লাউ বিক্রি করেন। দুপুর পর্যন্ত বসে থেকেও আর ক্রেতা পাননি। পরিবহন খরচ বাঁচাতে বাকি সব লাউ ফেলে যান তিনি।
হাবিবুর বলেন, মৌসুমের শুরুর দিকে দেড়-দুই কেজি ওজনের একেকটি লাউ বিক্রি করেছেন ৪০-৪৫ টাকায়। মাঝামাঝি সময়ে তা কমে ২৫-৩৫ টাকায় দাঁড়ায়। শেষ সময়ে ৫-১০ টাকায়ও বিক্রি করেছেন। কিন্তু শনিবার হাটে ক্রেতা না পাওয়ায় লাউ ফেলে যাচ্ছেন।
ফেলে যাওয়া এসব লাউ পরে এলাকার কেউ কেউ কুড়িয়ে নিয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহীদুজ্জামান। একই দিন ৭০টি লাউ এ বাজারে এনেছিলেন আড়ানী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, পাইকারি বিক্রি করতে না পেরে কুশাবাড়িয়া গ্রামের খুরচা ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে দিয়েছেন। বিক্রি করে টাকা না দিলেও তাঁর দাবি নেই।
গোচর গ্রামের চাষি জহুরুল ইসলাম সোনা আরেকজনকে ৬০টি লাউ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কত টাকা দেবে, কিছুই জানি না। জমিতে থাকা লাউ বিক্রি করতে পারছি না।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, আড়ানী বাজারে প্রচুর লাউ উঠে বলে পাইকার সেখানে আসেন। তারা না আসায় দামে ধস নেমেছে। এর সত্যতা মেলে কুশাবাড়িয়ার পাইকার আলান উদ্দিন বলেন, শনিবার হাটে লাউ কেনার ক্রেতা ছিল না। বাসুদেবপুরের সেন্টু আলী ৫০০ লাউ তাঁর আড়তে রেখে চলে গেছেন। তিনি কেনেননি এসব। পরে মানুষকে বিনাপয়সায় দিয়ে দেন।
তাঁর ভাষ্য, ‘গত মঙ্গলবার আড়ানী হাট থেকে সাড়ে ৬ টাকা করে এক হাজার লাউ কিনেছিলাম। ঢাকায় নিয়ে তিনদিন ধরে বিক্রি করেছি। এতে ৪ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তাই শনিবারের হাটে লাউ কিনিনি।’
এদিন আবার বাঘা বাজারে প্রতিটি লাউয়ের দাম বিক্রেতারা রাখছিলেন ২০ টাকা। ওই বাজারের সবজি ব্যবসায়ী পলাশ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সব ধরনের শাকসবজির দাম চড়া ছিল। শনিবার কোনো কোনো সবজির দামে ধস নামে। আড়ানি বাজার থেকে সকালে ১০ টাকা দরে লাউ কিনে খুচরা ২০ টাকায় বিক্রি করবেন। তিনি আরও বলেন, আমদানি বেশি। সেই তুলনায় ক্রেতা নেই। এ কারণে কম দামেও পণ্য বিক্রি করা যাচ্ছে না।
বাজারে লাউসহ সবজির সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা না থাকায় দাম কমেছে বলে মনে করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান। তিনি বলেন, উপজেলায় ৭৮ হেক্টর জমিতে লাউয়ের চাষ হয়েছে। শীত কমে যাওয়ায় লাউয়ের চাহিদাও কমছে।