রংপুর প্রতিনিধিঃ- ভরা মৌসুমে সংরক্ষণের জন্য আলু পাচ্ছেন না রংপুরের হিমাগার মালিকরা। জমি থেকে আলু উত্তোলন প্রায় শেষের পথে। এখন পর্যন্ত গড়ে হিমাগারগুলোর ৩০ শতাংশ স্থান খালি রয়েছে। ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকরা অপরিপক্ক অবস্থায় ক্ষেত থেকেই আলু বিক্রি করে দেওয়া, দক্ষিণাঞ্চলের হিমাগার মালিকরা মাঠ পর্যায়ে আলু সংগ্রহ করায় রংপুরের হিমাগার মালিকরা আলু পাচ্ছেন না। এ ছাড়া প্রতিবছর বড় বড় ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার বস্তা আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করলেও এবার ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বিভিন্ন প্রকার হয়রানির ভয়ে আলু ক্রয় করেননি।
জানা গেছে, রংপুর জেলায় ৩৯টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে আলুর ধারণ ক্ষমতা ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪৩৮ মেট্রিক টন। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আলু সংগ্রহ শুরু হয়। এবার মার্চ মাস শেষের পথে হলেও হিমাগার মালিকরা এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া পাননি। হিমাগারগুলোতে এ পর্যন্ত ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আলু সংরক্ষণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত হিমাগারগুলোর ৩০ শতাংশ আলু সংরক্ষণের স্থান খালি রয়েছে। হিমাগারের সংরক্ষিত আলু ব্যবসায়ী ও চাষিরা নির্দিষ্ট একটি সময়ে উত্তোলণ করে তা বাজারজাত করে থাকেন। হিমাগারগুলো কাঙ্ক্ষিত আলু না পেলে বাজারের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এই সুযোগে একটি সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে দেবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ বছর এক লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন। কৃষকরা বেশি দাম পাওয়ায় পরিপক্ক হওয়ার আগে ক্ষেতেই আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি জমির আলু উত্তোলন করা হয়েছে। এর বেশির ভাগ আলুই ক্ষেত থেকে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, কৃষক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫/২৮ টাকা কেজি দরে আলু স্থানীয় পাইকারের কাছে বিক্রি করেছেন কৃষকরা। ভরা মৌসুমেও আলুর দাম ও চাহিদা দুটোই থাকায় হিমাগারে রাখার বাড়তি ঝামেলায় যাচ্ছেন না কৃষকরা।
বড় ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর বেশি আলু সংরক্ষণ বা মজুদের অভিযোগে অনেক ব্যবসায়ীর জেল-জরিমানা হয়েছে। এ কারণে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী এবার আলু ক্রয় করেননি।
কাউনিয়ার চাষি আফজাল হোসেন, পীরগাছার চাষি বুলবুল মিয়া বলেন, ভাল দাম পাওয়ায় তারা ক্ষেত থেকেই আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে এবছর তাদের হিমাগারের ঝামেলা পোহাতে হবে না।
রংপুর জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, অন্যান্য বছর মার্চে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণ হয়েছিল, এ বছর তার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আলু সংরক্ষণ হয়েছে। ভাল দাম পাওয়া এবং দক্ষিণাঞ্চলের হিমাগার মালিকরা এখান থেকে বেশি দামে আলু সংগ্রহ করায় রংপুরের হিমাগারগুলোর ৩০ শতাংশ স্থান এখনো ফাঁকা রয়েছে।