বুয়েটে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের যন্ত্রকৌশল বিভাগের লেভেল-২ (টার্ম-১) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর জেরে উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ জারি করে বুয়েট প্রশাসন। এই ঘটনার চার বছর না পেরোতেই হাইকোর্টের আদেশে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরতে যাচ্ছে। আজ ছাত্রলীগের দাবির মধ্যে এক ছাত্রলীগ নেতার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আর এমন সিদ্ধান্তে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ নিজের ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন, আমি আবরার ফাইয়াজ, বুয়েট লেভেল-২(টার্ম-১) একজন শিক্ষার্থী। আমি বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠা হোক চাই না।’ মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে নিজের ফেসবুজ পেজে এমন পোস্ট করেছেন তিনি।
এছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৫০ জন ছাত্ররাজনীতি চায় না, আর পাঁচজন চায়। অথচ এই পাঁচজনের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি চাচ্ছে, তারা কি আর কাউকে মারার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে? ভাববে না। ছাত্ররাজনীতির অনুমতি দেওয়া মানে তাদের একধরনের ইনডেমনিটির (দায়মুক্তি) ব্যবস্থা করে দেওয়া, যাতে এর পর থেকে আর কেউ প্রতিবাদ করার সাহস না পায়।’
এদিকে গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বুয়েটে প্রবেশকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু করে বুয়েটের সাধারন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির সিট বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বুয়েটে যে কোনো মূল্যে ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে কাজ শুরু করে। এদিকে ক্যাম্পাসে যে কোনো ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আজও সংবাদ সম্মেলন করেছে বুয়েটের সাধারন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যার আগে বুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তাদের এ অবস্থানের কথা জানান শিক্ষার্থীরা। এসময় তিন শিক্ষার্থী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। হাইকোর্টে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি স্থগিতের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখবো যে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত যথাযথভাবে বিচার বিভাগের কাছে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যে ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারকে প্রশ্রয় দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদের। তা কখনোই আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি, আর ভালো কিছু বয়ে আনবেও না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশ ও বিদেশ থেকে অ্যালামনাইরাও বুয়েট ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতিমুক্ত রাখার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে দৃঢ়তা পোষণ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা তাদের অবস্থান আমাদের পক্ষে ব্যক্ত করছেন। আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীরা আমাদের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং ভরসা রাখি। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের উপাচার্যকে এই আর্জি জানাচ্ছি তিনি যেন আমাদের শিক্ষকদের নিয়ে আপামর বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা যেন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূরণ করেন।