কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : যে বাধাকপি বাজারে উঠেই দামে চোখ রাঙাতো, মৌসুমের শেষভাগে সেই কপির এখন অধপতন। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ৫ টাকা দরে প্রতি পিস বাধাকপি বিক্রি করা হলেও মিলছে না ক্রেতা। ফলে অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে বেশির ভাগ কপি। কেউ কেউ আরো কম মূল্যে কিনছেন গরু-মহিষ কিংবা ছাগল ভেড়াকে খাওয়াতে। এতে যাদের ফলন দেরিতে ওঠেছে তারা আর্থিক লোকসানে পড়েছেন। তবে দাম কম হওয়ায় স্বস্তিতে ক্রেতারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এক হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৫ মেট্রিক টন হিসেবে মোট ২ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ফুলকপি ৩৬০ হেক্টর এবং বাঁধাকপি ৩৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। বাঁধাকপির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন।
গতকাল বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার পাইকারী সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপির স্তূপ করে রেখে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন কৃষকরা। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের এক-একটি বাঁধাকপির পাঁচ টাকা হিসেবে দাম রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। বাসাবাড়ীর জন্য ব্যক্তি বিশেষ এক-দুইটি কপি কিনলেও পাইকারী ক্রেতা মিলছে না।
বাঁধাকপি নিয়ে বিক্রি করতে আসা উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের ভিমলপুর গ্রামের খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ৩১ শতক জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। মৌসুমের শুরুতে আশানুরূপ দাম পাওয়া গেলেও এখন এক-একটি কপি পাঁচ টাকা দাম রাখলেও পাইকারী ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ীতে ১২৫ টি কপি রিকশাভ্যানে আনতে ভাড়া দিতে হয়েছে ৫০ টাকা। বিক্রি না হলে কপিগুরো বাড়ীতে ফেরত নিতে আবার পরিবহণ গুণতে হবে ৫০ টাকা। যার সবটাই লোকসান। তবে এখন পর্যন্ত ব্যক্তি বিশেষের কাছে ৭০ টাকার কপি বিক্রি হয়েছে।
খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মুক্তারপুর ডাঙা গ্রামের বাঁধাকপি চাষি সুফিয়ান বলেন, মৌসুমের প্রথমে বাঁধাকপির দাম বেশি পাওয়ায় লাভের আশায় মৌসুমের শেষ দিকে ২২ শতক জমিতে বাঁধাকপি রোপণ করেন। কিন্তু এখন সেই কপি তার গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাইকারী বাজারে এক-একটি কপি ৫টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে না। এতে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়েছেন তিনি।
শাহীন বিশ্বাস নামের এক ক্রেতা বলেন, পাঁচ পাকা দরে ১৫ টাকায় তিনটি বাঁধাকপি কিনেছেন। একটি কপি বাসার লোকজন খাবেন আর অন্য দুইটি বাড়ীর গবাদিপশুকে দেবেন। তবে সব সবজির দাম যদি এই পর্যায়ে থাকতো তাহালে সাধারণ ক্রেতারা স্বস্তিতে থাকতেন।
পাইকারী সবজি বিক্রেতা অজয় দত্ত ও নবিউল ইসলাম বলেন, বাজারে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে বাঁধাকপি আমদানি হওয়ার পাশাপাশি বাইরের পাইকারদের কপি কেনার চাহিদা কমে যাওয়ায় বাঁধাকপির দাম কমে এসেছে। খুচরা বাজারেও তেমন বাঁধাকপির বিক্রি নেই বললেই চলে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহানুর ইসলাম বলেন, ‘এখন আসলে রবি মৌসুম শেষের দিকে। মৌসুম শেষ হওয়ায় এমনটা হচ্ছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে বাঁধাকপি চাষাবাদ হয়েছে।