আরবি শব্দ ‘লাইলাতুল কদর’-এর অর্থ হলো কদর রজনি। এর ফারসি শব্দ হলো শবেকদর। অর্থ- সম্মানিত ও মহিমান্বিত রজনি বা রাত। ভাগ্যনির্ধারণী রজনি। একটি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বরকতময় রাত হলো শবেকদর। মহাগ্রন্থ আল কোরআন এই রাতেই নাজিল করা হয়েছিল।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘রোজার মাস (এমন একটি মাস) যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে আর এ কোরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য পথের দিশা, সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও হক বাতিলের পার্থক্যকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)। ‘অবশ্যই আমি এ গ্রন্থটি এক মর্যাদাপূর্ণ রাতে নাজিল করেছি, তুমি কি জানো সেই মর্যাদাপূর্ণ রাতটি কী? মর্যাদাপূর্ণ রাতটি হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।’ (সুরা আল কদর, আয়াত ১, ২, ৩)।
কোরআন হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এই কোরআন হলো মানবজীবনের দিকদর্শন। রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবেকদরকে সন্ধান কর।’ (মুসলিম শরিফ) আর এই রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজান।
আরবি মাসে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়। রসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফে বসতেন। আল্লাহর সান্নিধ্য, শবেকদর তালাশ ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তিনি ইতেকাফে মগ্ন হতেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদাত করে তার অতীতের গুনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দেন।’ (বুখারি শরিফ, ৩৪)। সুবহানাল্লাহ।
শবেকদরের রাতে যেসব আমল করা উত্তম তা হলো- তাহাজ্জুদের নামাজ, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুল হাজতের নামাজ আর বেশি বেশি করে নফল নামাজ, ইস্তেগফার করা। সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা। সেজদা হলো আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সাক্ষাৎ।
এই দিনের শেষে (সূর্যাস্তের পর) আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করে তাঁর বান্দাদের আহ্বান করেন, কে আছ অসুস্থ আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তাকে শেফা দান করব। কে আছ অভাবগ্রস্ত, আমার কাছে চাও আমি আজ তার অভাব মিটিয়ে দিব। কে আছ আজ বিপদগ্রস্ত, আমার কাছে চাও আমি তার বিপদ দূর করে দিব।
লাইলাতুল কদরের রাতে আল্লাহর ওইসব বান্দা বেশি সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন যাদের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক বেশি। যিনি কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালিত করেন। আর এরাই হচ্ছেন সফলকাম। মর্যাদার এ রাতে আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর কাছে কীভাবে প্রার্থনা করবেন বা কী চাইবেন?
এ সম্পর্কে হাদিসে একটি বর্ণনা এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) রসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রসুল (সা.) আপনি বলে দিন, আমি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা যদি জানতে পারি, তাতে আমি কি দোয়া পড়ব? রসুল (সা.) বললেন, তুমি বলবে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হা মিম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা দুখান, আয়াত ১-৬)।
লাইলাতুল কদরের রাতে চার ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না। তারা হলো- ১. নিয়মিত মদ্যপানকারী ২. পিতামাতার অবাধ্য সন্তান ৩. আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী ৪. আর অন্যের ক্ষতি করার ইচ্ছা পোষণকারী।
এই রাতে জিবরাইল (আ.) আরও ফেরেশতাদের নিয়ে দুনিয়ার বুকে অবতরণ করেন এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। এই রাতে যারা নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ইস্তেগফার আর আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করতে থাকেন তাদের সঙ্গে ফেরেশতারাও আমিন আমিন বলতে থাকেন।