কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে নদী-নালা খালবিলে শুখিয়ে যাচ্ছে পানি। জমি ফেটে
হচ্ছে চৌচির। দেখা নেই বৃষ্টিরও। কবে মিলবে দেখা সেই আকাঙ্খিত বৃষ্টির,
সেও অজানা। তবুও থেমে নেই চাষাবাদ। তাই দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার
কৃষকদের বোরো আবাদে বাড়ছে খরচ।
প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় বোরো আবাদ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে
ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন চালিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা ।
এদিকে তাপপ্রবাহ বেশি থাকায় উপজেলার কিছু কিছু এলাকার জমিতে
দেখা দিয়েছে রোগবালাইও। সব মিলিয়ে এবার বোরো আবাদ খরচ অনেক বেশি
হবে এমনটাই ধারনা করছেন কৃষকরা।
উপজেলার পৌর এলাকার বারোকোনা গ্রামের কৃষক সৈয়দ সাইদুল ইসলাম
রয়েল বলেন, অতিরিক্ত তাপে খেতে রোগবালাই ধরতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে
আগেভাগে রোগ প্রতিরোধক কিছু ওষুধ জমিতে ছিটিয়েছি। এখন পর্যন্ত
দেড় হাজার টাকার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। পুরো বৈশাখ মাসে এমন তীব্র
তাপপ্রবাহ থাকলে বোরো চাষে প্রতি একরে পানি ও কীটনাশক ওষুধের ব্যয় বাড়বে
৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
উপজেলা শিবনগর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কৃষক সুভাস চন্দ্র রায়
বলেন, চলমান প্রচন্ড তাপপ্রবাহে বোরো ধানখেত ও সবজি নিয়ে দুশ্চিন্তা
পড়েছি। হিট শক ও বøাস্ট সংক্রমণ যাতে না হয়, সেজন্য ঘন ঘন সেচ ও ওষুধ দেওয়ায়
গত বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন খরচ বাড়বে।
একই ইউনিয়নের বুজরুক সমশেরনগর গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, আর
কত দিন এমন গরম থাকবে? এমন গরম থাকলে কৃষকের সবজি খেতে ঠিকমতো ফুল
ও ফল আসবে না। উৎপাদন কম হবে। আর ধানের শীষ চিটা হয়ে যাবে। এবার সেচ
খরচ খুবই বেশি হচ্ছে। ধানের দাম ভালো না পেলে লোকসান গুণতে হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো চাষ
মৌসুমে উপজেলার পৌরএলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা
ছিল ১৪ হাজার ১৭৯ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে।
এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। কৃষকরা ১৫
মার্চ পর্যন্ত বোরো চারা রোপণ করেছেন।
উপজেলার কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, প্রচন্ড রোদে বোরো খেত শুকিয়ে
যাচ্ছে। সেগুলোতে ফসল রক্ষায় ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন
কৃষকেরা। কেউ কেউ করছেন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা বেশি থাকায়
খেতের পানি দ্রæত শুকিয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ পাম্প দিয়ে
পানির চাহিদা পূরণ না হওয়ায় কৃষকেরা ব্যক্তি উদ্যোগে ডিজেলচালিত মেশিন
দিয়ে এক দিন পর পর সেচ দিচ্ছেন। অনেক খেত শুকিয়ে হিট শক ও ব্লাসট দেখা দিতে
পারে এমন আশঙ্কায় এবং ফসল রক্ষায় খেতে নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করছেন কৃষকরা।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, তীব্র
তাপপ্রবাহের বিরুপ প্রভাব থেকে ফসলের খেত রক্ষা করার জন্য মাঠপর্যায়ে
কৃষকদেরকে খেতে সেচ ধরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা অনেক
সচেতন, তাই তারাও মাঠে বোরোধান খেতসহ অন্যান্য ফসল রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টা
করছেন।