টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কৃষিশ্রমিকের হাটগুলো এখন জমজমাট। উপজেলার কয়েকটি বাজারে ধান কাটার মৌসুমে শ্রম বিক্রি হয়। উপজেলার আউলিয়াবাদ, এলেঙ্গা, নারান্দিয়া, রামপুর কালিহাতী সদর এসব বাজারে ভোর হলেই শ্রমিকরা এক জায়গায় সমেবেত হন।
টাঙ্গাইলের উত্তরাঞ্চল,রংপুর,পাবনা, নাটোর, কুড়িগ্রাম,পঞ্চগড়,রাজশাহী, সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার কৃষি শ্রমিকরা দলে দলে ধান কাটার কাঁচি, ধানের আঁটি বহন করার প্রয়োজনীয় রশি ও স্থানীয় ভাষায় বাঁশের তৈরি বাইগ নিয়ে হাটগুলোতে শ্রম বিক্রির জন্য হাজির হচ্ছেন। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জমজমাট থাকে শ্রমের বাজার। কৃষকের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে কার আগে কে মজুরির ফয়সালা করে মাঠে নিয়ে যাবে। ফয়সালা হয়ে গেলে নিকটে হলে হেটে দূরবর্তী হলে অটো বা সিএজিতে নিয়ে যাওয়া হন।
সরেজমিন দেখা যায়, বীরবাসিন্দা, পারখী, নাগবাড়ী, বল্লা, কোকড়হরা, পাইকড়া, সহদেবপুর, বাংড়া, নারান্দিয়া, সল্লা, দশকিয়া, দূর্গাপুর, গোহালিয়াবাড়ী, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও কালিহাতী এবং এলেঙ্গাসহ ২টি পৌরসভা এই এলাকায় ধানের ওপর নির্ভরশীল এসব এলাকার কৃষক পরিবার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে গত বছরের মতো এবারো ধানের দর একই অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর প্রতি মণ ধানের বাজার দর ছিল ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা। ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি ১২০০ টাকা।
উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের আওলাতৈল গ্রামের কৃষক আহাদ আলী বলেন, এ বছর ঝড়-তুফান না থাকাতে ফলন ভালো হয়েছে। তবে আমাদের এলাকায় শ্রমিকের মজুরি ১২০০ টাকা। শ্রমিকের মজুরি অনুপাতে ধানের মূল্য কম। তাই ধান আবাদ করেও আমাদের প্রতিবছর লোকসানে পড়তে হয়।
কোকড়হরা ইউনিয়নের টেংগুরিয়া গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক জানান, ধান কাটার জন্য ভোরে আউলিয়াবাদ বাজার থেকে ৫ জন শ্রমিক এনেছি। যার মূল্য প্রতিজন ১১০০ টাকা। এ বছর একমণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে না। শ্রমিকের মজুরি বেশি থাকায় নিজের জমিতে নিজেই কামলা দিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফারহানা মামুন বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষক পাকা ধান কর্তন করছে শ্রমিকের মূল্য একটু বেশি হলেও ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অজির্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টরের বেশি। ব্রি ২৮ ও ২৯ জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। নতুন জাতের মধ্যে বিনা ধান ২৫, ব্রি ধান ৮৯, ৯২, ১০০ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও ছিল। আশা করছি নতুন জাতগুলো সম্প্রাসারণের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হলে কৃষক আরো লাভবান হবেন।