গরমে যেন প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তাপমাত্রার পারদ যতটুকু দেখায়, তার চেয়ে ঢেরে বেশি উত্তাপ অনুভূত হয়। হাঁসফাঁস এই পরিস্থিতির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন নানা বয়সী মানুষেরা। অস্বস্তিকর এই গরমের দুই কারণ চিহ্নিত করেছেন আবহাওয়াবিদরা। তাদের মতে, এখন যেরকম গরম পড়েছে তার প্রধান কারণ বাতাসের আর্দ্রতা। পাশাপাশি বৃষ্টি কম হওয়ার কারণেও এই দুরবস্থা। বর্ষা আসার আগেই কালবৈশাখীর কারণে গত বছর আবহাওয়া এতটা চরম অবস্থায় ছিল না। সে তুলনায় এবার বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। এই কারণেই এতটা গরম পড়েছে।
গত বছর (২০২২ সালে) ৪ জুন দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটেছিল। জ্যৈষ্ঠ মাসেই চলে এসেছিল বর্ষা। সে হিসেবে এবার সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ১০ জুন। একেবার আষাঢ় মাসেই বর্ষার আগমন ঘটবে বলে মনে করছে আবহাওয়া অধিদফতর। তারা বলছে, ঋতুর পালাবদলের এই সময়টা খুব নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তো আছেই। সব মিলিয়ে বর্ষা এবার যেমন কিছুটা দেরিতে আসছে, তেমনি বৃষ্টি কম হওয়ারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর বাতাসের আর্দ্রতা এত বেশি যে মানুষের শরীরে ঘাম বেশি হচ্ছে। সহজে শুকাচ্ছে না। এজন্য অস্বস্তিকর এক গরম অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী জুনের প্রথম সপ্তাহেই আসার কথা ছিল মৌসুমি বায়ুর। কিন্তু এখন তারা জানাচ্ছে, দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের উপকূলে আসবে এটি। এদিকে সারা দেশে এই বায়ুর বিস্তার লাভ করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। সেই হিসাবে তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ সারা দেশে বর্ষার বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তবে তার আগে ১০ জুন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হবে। এতে কমে আসবে তাপমাত্রা।
তবে আবহাওয়া অফিস থেকে এটাও জানানো হয়েছে, পুরো বর্ষা শুরু না হওয়া পর্যন্ত এই গরম পুরোপুরি কমবে না। কারণ যে পরিমাণ তাপপ্রবাহ হচ্ছে তাতে মাটির উষ্ণতা অনেক বেড়ে গেছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসেও বলা হয়, জুন মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষাকাল) বিস্তার লাভ করতে পারে।
এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুর ও সৈয়দপুর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, সিলেট বিভাগসমূহ এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।