বগুড়ায় তাপমাত্রার রেকর্ড ৪০.২ ডিগ্রি।
গতকাল শুক্রবার (১৬ জুন) ছিল সর্বকালের উষ্ণতম দিন বগুড়াবাসীর জন্য। আষাঢ়ের বৃষ্টিহীন ভ্যাপসা গরমের দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা বগুড়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
বাতাসে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন আছে ৯৯ ভাগ, বাকি এক ভাগের মধ্যে আছে অল্প পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড। ভূপৃষ্ঠ থেকে যে তাপ নিঃসরণ হয় তা শুষে নেয় কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প, পৃথিবীর তাপমাত্রা তাই বেড়ে যায়। এ কারণেই পৃথিবী পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে।
শীতকালে দেশের আকাশে উত্তর থেকে পূর্ব দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। তখন বাতাস শুষ্ক হয় এবং ঠোঁট ফাটে। অন্যদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাংলাদেশের আকাশে দক্ষিণ থেকে পশ্চিমে বাতাস প্রবাহিত হয়। এই বাতাসে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের প্রচুর জলীয় বাষ্প। ফলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে বেশি। এ অবস্থায় গরমে ঘাম হয়। শরীর ঘামলেও তেমন জ্বালাপোড়া করে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হওয়া এক বিশেষ পরিস্থিতি এ বারের গরমের জন্য অনেকাংশে দায়ী। আমাদের পৃথিবীর জলবায়ু একস্থানে পরিবর্তন ঘটলে সর্বত্রই এর প্রভাব পড়ে এবং পরিবর্তন ঘটে। সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বাতাস প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহকে বলা হয় ট্রেড উইন্ড। সাগরের গরম বায়ু এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়।
ফলে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দিকে সাগরতলের শীতল পানি উপরে উঠে আসে। এ অবস্থাকে বলে আপওয়েলিং। আপওয়েলিংয়ের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের অস্থিতিশীল আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। তখন এশিয়া অঞ্চলে প্রচুর মেঘ ও বৃষ্টি হয়। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেলে তাকে বলা হয় ‘লানিনা’। যদি প্রশান্ত মহাসাগরের বায়ু উল্টো দিকে প্রবাহিত হয় তাকে বলে ‘এল নিনো’।
যে বছর এল নিনো হয় সে বছর এশিয়া অঞ্চল থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় শীতল বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। প্রতিটি এল নিনো ও লানিনার জন্য আবহাওয়া বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। চলতি বছর লানিনা প্রভাবের কারণে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বাতাস প্রবাহের স্বাভাবিক গতি কমে গেছে।
এ কারণে বাংলাদেশের উপর দিয়ে দক্ষিণ থেকে পশ্চিমে বাতাস প্রবাহিত না হয়ে উত্তর থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে এত গরম পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার (১৬ জুন) ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বগুড়ায় রেকর্ড করা হয়েছে। মূলত বর্ষা আসতে দেরী হওয়ার জন্য গরমটা বেশি।