সর্বশেষ :

১৫ ফুট গভীর দুই পুকুরের মাঝে সরু পথ: মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে ১২৫ শিক্ষার্থী


এনাম হকঃ-
ডিসেম্বর ২১, ২০২৫ । ৪:৩৯ অপরাহ্ণ
১৫ ফুট গভীর দুই পুকুরের মাঝে সরু পথ: মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে ১২৫ শিক্ষার্থী
সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর (বগুড়া)ঃ বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের হুসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাতায়াত পথটি এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য চরম মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিদ্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে থাকা প্রায় ১৫ ফুট গভীর দুটি পুকুরের মাঝখানের অত্যন্ত সরু পাড় দিয়েই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে অন্তত ১২৫ জন শিক্ষার্থী। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা।

১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘ চার দশক ধরে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশ ও দশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত। তবে সুনামের এই বিদ্যাপীঠে প্রবেশের একমাত্র পথটি এখন ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। বিদ্যালয়ের নিজস্ব ৩৩ শতাংশ জমি থাকলেও কোনো প্রশস্ত সংযোগ সড়ক নেই। ফলে পুকুর দুটির মাঝখানের পিচ্ছিল ও সরু আইলই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের একেবারে গা ঘেঁষেই রয়েছে বিশাল দুটি গভীর পুকুর। সামান্য বৃষ্টি হলেই পথটি পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। পাড় ভাঙতে শুরু করায় রাস্তাটি এখন এতটাই সংকীর্ণ যে, দুজন মানুষ পাশাপাশি হাঁটাও অসম্ভব। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওসমান গণি তার আতঙ্কের কথা জানিয়ে বলে, “স্কুলে আসার সময় খুব ভয় লাগে। রাস্তাটা অনেক চিকন, একটু এদিক-সেদিক হলেই পুকুরে পড়ে যাব। বর্ষাকালে তো আসা প্রায় বন্ধই হয়ে যায়।” একই ভয়ের কথা জানায় চতুর্থ শ্রেণির ফাতেমা ও তৃতীয় শ্রেণির রিফাত।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন বলেন, “যাতায়াত ব্যবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তা না থাকায় কোনো উন্নয়ন কাজের মালামাল বা গাড়ি ভেতরে আনা যাচ্ছে না। এছাড়া ভবনের পাশের একটি বড় বটগাছও এখন ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

পুকুরের মালিক আব্দুস সাত্তার অবশ্য ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন যদি গাইড ওয়াল নির্মাণ বা রাস্তা প্রশস্ত করতে চায়, তবে তার কোনো আপত্তি নেই।

শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটার আগেই যেন দ্রুত এই যাতায়াত সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হয়।


বিটি/এনআরসিএ


[scriptless]